মুহাম্মদ ইউনূসকে অসম্মান করার অর্থ দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইকে বাধাগ্রস্ত করা
সংবাদ-ভিত্তিক ভারতীয় ওয়েবসাইট দ্য ওয়্যার এ গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট বেঙ্গালুরুর সেন্টার ফর পাবলিক পলিসির প্রফেসর এম.এস শ্রীরাম এর লেখা নিবন্ধ ( https://thewire.in/rights/maligning-muhammed-yunus-means-impeding-fight-against-poverty) এর বাংলা অনুবাদ।
------------------------------
মুহাম্মদ ইউনূসকে অসম্মান করার অর্থ দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইকে বাধাগ্রস্ত করা
ইউনূস বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছিলেন শুধু তাঁর নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমেই নয়, বরং ব্যবসায়িক জগতের নিয়মিত কথোপকথনে দারিদ্র্য থাকা উচিত Ñ তাঁর এই মতবাদটি বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমেও ।
একটি এক—মেরুবিশিষ্ট বিশ্বে, যেখানে বাজারকে আমরা সবকিছুর চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে নির্বিচারে মেনে নেই Ñ যেখানে ভাল করা হলো ভাল করে করার একটি উপজাত, সেখানে মুহাম্মদ ইউনূস কী বলছেন, কী করছেন এবং কেন তাঁর সাথে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা দরকার তা বোঝা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা মনে করা একেবারেই ঠিক হবে না যে, ইউনূস ইদানীং সব ভুল কারণেই সংবাদে আসছেন, যার অর্থ এই যে, তিনি সংবাদ তৈরি করছেন। ইউনূসের জন্য এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, তিনি সংবাদ হয়েছেন তিনি যা করেছেন সম্ভবত সে কারণে নয়, তিনি সংবাদ হয়েছেন বিশ্বব্যাপী তাঁর বিপুল পরিচিতির জন্য!
সুশীল সমাজের অনেকেই যাঁরা স্থিতাবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও বহিরাগত হিসেবে কাজ করছেন ইউনূস তাঁদের চেয়ে ভিন্ন Ñ তাঁর পথযাত্রা একজন ভেতরকার সমালোচকের। তিনি স্থিতাবস্থার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি, তবে স্থিতাবস্থার নিয়মগুলিকে বহুলভাবে কাজে লাগিয়ে তার বিপরীতে একটি বিকল্প মডেল দাঁড় করিয়েছেন।
ইউনূসের জীবন ও কর্মের দুটি অধ্যায় রয়েছে যা আমাদের জানা দরকার। এর প্রথমটি হলো তাঁর উদ্ভাবিত একটি সফল ক্ষুদ্রঋণ মডেল যা তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার এনে দিয়েছিল; পরেরটি হলো একটি সংগ্রামী সামাজিক ব্যবসা মডেল। উভয় ক্ষেত্রেই তিনি বাজার ব্যবস্থা ও তার কাঠামোর মধ্যে থাকলেও মালিকানা এবং মুনাফা বণ্টনের ক্ষেত্রে বিকল্প মডেল উপস্থাপন করেছেন। ভারতে ক্ষুদ্রঋণের স্ববিরোধিতায় এটি পরিস্কারভাবে লক্ষণীয়, যেখানে পরিচালনাগত দিক দিয়ে মডেলটি আর্থিক পরিষেবায় প্রবেশাধিকার প্রদান করছিল একটি পরিপূরক মালিকানা কাঠামো ছাড়া, যার পরিণতি হলো ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিতে বিনিয়োগকারীদের সম্পদবৃদ্ধি। ইউনূস যখন বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের ধারণাটি প্রয়োগ করেছিলেন, তখন তিনি ঋণবাজারের সর্বশেষ স্তর অর্থাৎ এর উদ্দিষ্ট দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মাথায় রেখেই এর কাঠামোটি নির্মাণ করেছিলেন। ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতার মধ্যকার দূরত্বটি দুর করা হয়েছিল একটি মধ্যবর্তী দল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, এবং লেনদেনগুলিকে প্রমিত ও সমগ্রীভূত করা হয়েছিল যা সামাজিক জামানত সৃষ্টির পাশাপাশি লেনদেনে দক্ষতা নিশ্চিত করেছিল। এগুলি যে—কোন ব্যবসার জন্য হৃদয়গ্রাহী হতো।
ইউনূস কখনই ভর্তুকির জন্য সুপারিশ করেননি, এবং প্রকৃতপক্ষে, ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে বাজারের প্রচলিত সুদের হারই ধার্য করেছিলেন। এতে পার্থক্যটা কী ছিল? ইউনূস যে মৌলিক প্রশ্নটি তুলেছিলেন তা এই ছিল না যে, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাণিজ্যিকভাবে টেকসই হবে কি—না, তিনি ভাবছিলেন অবশিষ্ট মুনাফার বণ্টনের পদ্ধতি নিয়ে। উভয় মডেলেই Ñ ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে যেখানে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা ছিল এর ঋণগ্রহীতা মহিলাদের কাছে Ñ এবং সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রেও তিনি মুনাফাকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বন্টনের পরিবর্তে সমাজের উপকারার্থে কোম্পানীতেই পুনঃবিনিয়োজিত করার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তিনি একটি পুনর্বন্টন মডেল নির্মাণ করেছেন এবং যুক্তি দেখিয়েছেন যে, বিনিয়োগকারীদেরকে একটি গ্রহণযোগ্য (কিন্তু অসমঞ্জস্যপূর্ণ নয়) হারে মুনাফা দেয়া উচিত। যাঁরা একটি অধিকতর সমতাভিত্তিক ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে ব্যবসা ও বাজার ব্যবস্থার গুরুত্বও অনুধাবন করে থাকেন তাঁদের কাছে ইউনূসের এই কাঠামোটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ইউনূসের উপর নির্যাতন ও তাঁর সম্মানহানি শুধু এই মানুষটিরই ক্ষতি করা নয়, এর মাধ্যমে তিনি যে বৃহত্তর আইডিয়াটির প্রতিনিধিত্ব করেন তার উপরও আঘাত করা হয়। আগেই যেমনটি বলা হয়েছে, ইউনূসের উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রঋণকে সহজেই একটি বাণিজ্যিক উদ্ভাবন বলা যেতে পারে Ñ ভারতে অনুসৃত গ্রামীণ মডেলের প্রতিলিপিতে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলে। গ্রামীণ—এর ভারতীয় প্রতিলিপি নিছক এর মাঠ পর্যায়ের পরিচালনাতেই দৃশ্যমান; এর মালিকানা সম্পদের পুনর্বণ্টনের দিকে ধাবিত হয় না। এর ফল হয়েছে বরং বিনিয়োগকারীদের হাতে এর মেরুকরণ। পরিহাসের বিষয় হলো, সোশ্যাল স্টক এক্সচেঞ্জ—এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, বেসরকারী মূলধনী প্রতিষ্ঠানগুলির গড় মুনাফার তুলনায় ক্ষুদ্রঋণ খাত বিনিয়োগকারীদের জন্য উচ্চতর মুনাফার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
ইউনূস বিশ্বাসযোগ্যতা ও বিবেকের কণ্ঠস্বরের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি পরিচালনাগত মডেলের প্রশংসা করতে যেমন কার্পণ্য করেননি, তেমনি মালিকানা মডেলের সমালোচনা করতেও কখনো দ্বিধা করেননি, সেটা ভারতের খ্যাতনামা এসকেএস মাইক্রোফাইন্যান্স যখন শেয়ার বাজারে আঘাত হানে কিংবা মেক্সিকোর নেতৃস্থানীয় ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা কমপার্টামোস তার ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং নিয়ে আসে। তিনি বাণিজ্যের জগতে সমতার যুক্তির প্রতিনিধিত্ব করেন।
ইউনূস কি কোন বিশেষ রাজনৈতিক ব্যবস্থা বা অন্য কারো জন্য হুমকিস্বরূপ?
কোনো যুক্তিতেই তাঁকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। হঁ্যা, তিনি তাঁর ভক্তদের চাপে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিন্তু শীঘ্রই তা পরিত্যাগও করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, ব্যবসায়িক জগত ও রাজনৈতিক জগত একেবারেই আলাদা দুটি জগত। ব্যবসায়িক বিশ্ব তাঁকে হুমকি হিসাবে দেখেনি, বরং ক্রমাগত তাঁর আইডিয়াগুলি গ্রহণ করছে, তা সে বহুজাতিক ড্যানোন হোক বা যে কোন সংস্থা যা সামাজিক ব্যবসা করার উপায় পরীক্ষা করে দেখে Ñ অর্থাৎ হৃদয় দিয়ে ব্যবসা।
ইউনূস বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছিলেন শুধু তাঁর নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমেই নয়, বরং ব্যবসায়িক জগতের নিয়মিত কথোপকথনে দারিদ্র থাকা উচিত Ñ তাঁর এই মতবাদটি বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমেও। ব্যবসায়িক বিশ্বের মানুষজন সহ সকলেরই কথোপকথনে সমতা নিশ্চিত করার এই বিষয়টি অবশ্যই থাকতে হবে। রাষ্ট্র যেখানে মূলত করারোপ ও পুনর্বন্টনের সাথে যুক্ত, ইউনূস সেখানে সমতার বৃহত্তর ধারণাটির প্রতিনিধিত্ব করছেন। এটি এমন একটি ধারণা যা রাষ্ট্রকে পুনর্বন্টনের তাগিদ দেয়না যদি ব্যবসায়িক বিশ্ব নিজেই আরও সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক হয়ে ওঠে। তিনি বিশ্বাসযোগ্য এবং বিকল্প ব্যবসায়িক মডেলের মধ্য দিয়ে ধারণাটি প্রমাণ করেছেন। কিন্তু একাজ করতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের ব্র্যান্ডকেই কেবল বড় করেছেন। যদিও বর্তমান সরকার ক্ষুদ্র এই দেশটির জন্য আরো ভাল মানব উন্নয়ন সূচক প্রতিষ্ঠার দাবি করতে পারে, ইউনূসকে নিপীড়ন করে কেউই লাভবান হবে না। এটি কেবল একটি দুর্দান্ত ব্র্যান্ডকেই ধ্বংস করবে এবং একে স্বৈরশাসনের পর্যায়ে নামিয়ে আনবে।
এটা দুঃখজনক যে, কোন কোন দেশ তুচ্ছ কিছু বিবেচনা থেকে তাদের নায়কদের যথাযথ সম্মান দিতে ব্যর্থ হয়। ভারত এম. এফ. হোসেনের ক্ষেত্রে এটা করেছে, বাংলাদেশ করছে ইউনূসের ক্ষেত্রে। আমাদের জীবন্ত কিংবদন্তিদের সাথে আমাদের আরো সতর্কতার সাথে আচরণ করা দরকার। হ্যাঁ, তাঁরা মানুষ এবং তাঁদের ভুল হতে পারে, কিন্তু আমাদের অবশ্যই ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে ইউনূসের মতো একজন মানুষের সাথে যিনি শুধু বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থাতেই বিপ্লব আনেননি, যিনি ভারতের ব্যাংকিংয়ে মহিলাদের অংশগ্রহণের ধারণা এবং আরও অনেক কিছুতে বিপুল অবদান রেখেছেন!
এম. এস. শ্রীরাম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট বেঙ্গালুরুর সেন্টার ফর পাবলিক পলিসির একজন অধ্যাপক। যোগাযোগ: mssriram@pm.me
Manager - Group marketing lead at NEW GENERATION GROUP ,
1yThis is absolutely Wrong !! Mr . Yunus not keeping a single contribution for improving Bangladesh poverty !!
Human Resources Management @ Al Essa |
1yNobel Laureate Dr. Mohammed Yunus Is A Victim Of Revenge Politics!
Instrument & Control System | ISA CCST® III
1yThat's right ! but unfortunatley several yellow media of our country manufulating the news as they afraid of expose truth and show respect to our honorable leaders, speakers who are in fact true driver of the economy upwards. and the corruption is turning into the curse from every side. “Integrity, transparency and the fight against corruption have to be part of the culture. They have to be taught as fundamental values.” hope all these corrupt people gets some hedaya and learn lessons to stay away from their limitless sins.
Managing Director at Klindex (Bangladesh) Limited
1yYou are great man
Achieved PSEUDO (geo) ENGINE 🚂 by modern technology used remaining energy of three possible Gravity properties and collected them at a single output point ☝️.
1yDear sir, Hope you respond to me regarding my research work on Renewable energy. A kind of energy mechanism I developed thereby it is very easy to produce current as well as mini hydal power plant with negligible input. A well grounded perspective in Climate and environment by it's zero emissions technology. I need help at final implimentation. Thank you.